চলতি আমন মৌসুমে চালের বাজার হেঁটেছে উল্টো রথে। আমনের নতুন ধান গোলায় ওঠার পর দাম কমার কথা ছিল। কিন্তু দুই দফায় বস্তাপ্রতি ২-৪শ টাকা বেড়েছিল। শেষতক বাজারে স্থিতিশীল আনতে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। এ উদ্যোগের পর এখন বস্তাপ্রতি ৫০-১৫০ টাকা কমেছে চালের দাম।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন বলেছেন, চাল আমদানির কিছুটা প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত কয়েক দিনে চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা কমেছে।
কর্পোরেট কোম্পানি ও উত্তরবঙ্গের বড় চাতাল এবং মোকামের সিণ্ডিকেটে চালের বাজার জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছেন প্রবীণ চাল ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রচুর পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। সিণ্ডিকেট ভাঙতে না পারায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বাজার ও বড় ব্যবসায়ীদের গুদামে মনিটরিং করা হলেই বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে।
চট্টগ্রামে চালের পাইকারি মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে দুই দফায় বেড়েছে চালের দাম। সর্বশেষ গত মাসের (জানুয়ারি) প্রথম সপ্তাহে সরু চালের দাম বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়েছিল। অন্যান্য চালের দামও বস্তাপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেড়েছিল। চলতি মৌসুমে দুই দফায় চারশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাড়তি দামের মধ্যে গত কয়েক দিনে বস্তাপ্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। চাল আমদানি বাড়ানোর পর দাম কিছুটা কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জিরাশাইল চাল কয়েক দফায় বেড়ে ৪০০০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছিল। বর্তমানে একশ টাকা কমে ৩৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট সিদ্ধ ৩১৫০ টাকা থেকে কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকায়। মিনিকেট আতপের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ৩৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল ৪২০০-৪৩০০ টাকা থেকে কমে ৪১০০ ও ৪২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারি আতপ ৪১০০-৪২০০ টাকা থেকে কমে ৪১০০-৪১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারি সিদ্ধ অপরিবর্তিত দাম ৪০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও স্বর্ণ সিদ্ধ (ভালো মান) ২৯০০-২৯৫০ টাকা থেকে কমে ২৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গুঁটি স্বর্ণ সিদ্ধ ২৫৫০-২৬০০ টাকা থেকে কমে ২৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা আতপ ২৪০০ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
পাইকারি মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অজুহাতে বেড়েছিল চালের দাম। আগস্ট মাসে সরকার পতনের পর আরেক দফা বেড়েছিল। পরিবহন সংকট ও গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে দুই দফায় বাড়ানো হয়েছিল। এরপর জুন-জুলাই মাসে তৃতীয় দফায় বাড়ে বন্যার অজুহাতে। ডিসেম্বর মাসে আমন কাটা শুরু হওয়ার পর ধানের দাম বাড়তির অজুহাতে চতুর্থবারের মতো অকারণে বেড়েছিল চালের দাম। জুলাই মাস থেকে এভাবে ক্ষণে ক্ষণে বেড়েছিল চালের দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার চাল আমদানির অনুমতি দেয়। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির পরও বাড়ছে চালের দাম।
সরকারের মজুত পরিস্থিতি : খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েটসাইটে দেখা যায়, সরকারের কাছে বর্তমানে চাল, গম ও ধানের মজুত রয়েছে ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৮৮২ টন। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ছিল ১২ লাখ ২৫ হাজার ৪৮২ মে. টন। এক মাসের ব্যবধানে সরকারের কাছে মজুদ পরিস্থিতি প্রায় এক লাখ টন বেড়েছে।
একইভাবে বেড়েছে আমদানি পরিস্থিতিও। ১ জুলাই থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি- বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে তিন হাজার ৮৯৭ দশমিক ৯ টন। ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল ৩১৯২ দশমিক ৫৯ টন। চলতি আমন মৌসুমে ধান-চাল ও গম সংগ্রহ হয়েছে চার লাখ ৩৫ হাজার ৩০৪ টন। সূত্র: পূর্বকোণ
চস/স