দ্রব্যমূল্য অনিয়ন্ত্রিত। লাফিয়ে লাফিয়ে তৈল চিনি চালের দাম বাড়ছে। মাছ মাংস তরিতরকারী কোনো সময় নিয়ন্ত্রিত আবার কখনো কখনো আকাশ চুম্বী দামে নাগালের বাইরে চলে যায়। বাজার মনিটরিং এর জন্য সরকারী বেসরকারী একাধিক সংস্থা কাজ করলেও জনগণ তার ফল খুব একটা ভোগ করতে পারেনা। আসলে বাজার মূল্য বেচা বিক্রি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় সাধারণ জনগণ সেটা বুঝে উঠতে পারেনা। দাম বাড়লেই জনগণ বলে থাকেন সিন্ডিকেট করে এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়।
সরকার টিসিবির মাধ্যমে সারা দেশে কতিপয় পণ্যের খোলাবাজারে বিক্রি করলেও তবুও বাজারে জনগণের নাগালে নিত্যপণ্য পাওয়া কঠিন। ৩০ টাকার সয়াবিন তেল লিটার ১৬০ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ৩০ টাকার চিনি এখন ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডাল পিয়াঁজ আদা রসুন সবকিছুর মূল্য উর্ধ্বমুখী। হু হু করে চালের বাজার বেড়ে এখন মোটা চাল কেজি ৫০ টাকার মধ্যে এসে থেমেছে। এভাবে সব ধরনের নিত্যপণ্য হু হু করে বাড়া অব্যাহত আছে। এসব পণ্য দেশের আমজনতা কৃষক থেকে দিন মজুর খেটে খাওয়া মানুষের নিত্যদিনের আহারযোগ্য পণ্য। উচুঁ তলায় বিত্তশালী ব্যবসায়ী শিল্পপতি আমলা চাকরিজীবি যারা আছেন তাদের জন্য মূল্যবৃদ্ধি কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা শুধু নিম্ন মধ্যবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের বেলায় । এসব মানুষের সংখ্যা ৮৫ ভাগ। তাদের কথা চিন্তার জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ স্থিতিশীল রাখবার উদ্দেশ্যেই মন্ত্রণালয় রয়েছে।
বাজর মনিটরিং কমিটি রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। তবুও এই করোনাকালীন দুর্যোগের সময় মানুষের যখন আয় ইনকাম সীমিত, কেউ বেকারত্বের অভিশাপে জীবন পার করছে, এক বেলা খেয়ে এক বেলা না খেয়ে দুর্যোগের সময়ে বন্যা কবলিত মানুষগুলো যখন মানবেতর জীবন যাপন করছে তখন মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতি লাভের আশায় নিত্যপণ্য মূল্যের দাম বৃদ্ধির কুষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কালো হাত ভাংতে হবে। তেল সিন্ডিকেট চিনি সিন্ডিকেট চাল পিঁয়াজ সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে আইন শৃংখলা বাহিনীকে কঠোর নজরদারীতে মাঠে থাকতে হবে।
সহনীয় মূল্যের বাইরে যারা ব্যবসার নামে মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পকেট কর্তন করছে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। দোকান বাজারে সাধারণ জনগণ অসহায়। পেটের অভাবে যে ধরনের মূল্য দোকানদার চায় তা দিয়েই গ্রাহককে পণ্য ক্রয় করতে হয়। বাজার মার্কেটে দেখা যায় পণ্যের মান যাই হোক না কেনো সিন্ডিকেট করে একইভাবে সকলেই একযোগে একই দামে পণ্য বিক্রি করছে। অসহায়ভাবে পণ্য গ্রাহককে পণ্য ক্রয় করতে হয়। সরকার মাঝে মধ্যে পণ্যের তালিকা দোকানে রাখার জন্য বলা হলেও সেটায় তেমন একটা ফল ভুক্তভোগী জনগণ পায়না। জনগণকে খাদ্যে নিরাপত্তা এবং তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী সরবরাহে সরকারকে সর্বদা জনগণের পাশে থাকতে হবে। বাজার মাকেটে পাইকারী খুচরা মূল্য সবসময় তদারকীর আওতায় রাখতে হবে। খাদ্যপণ্য বাজার নিয়ন্ত্রণ জনগণের নাগালের মধ্যে রাখা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। সে দায়িত্ব কোনো অবস্থায় দুর্বলভাবে ছেড়ে দেয়া যায়না।
নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের সিংহভাগ মানুষদের রুজি রুটির অধিকার নিশ্চিত করা সাংবিধানিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রকে পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হবে। কারণ যারা ক্ষমতায় রয়েছে তারা জনগণের অন্ন্ বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। জনগণের সুবিধা অসুবিধা খাদ্যের প্রয়োজনীয় পণ্য সঠিকভাবে সরবরাহ মূল্য নিয়ন্ত্রণ বাজারজাত সবকিছু রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোনো অবস্থায় এসব দায়িত্ব থেকে রাষ্ট্র বিরত থাকতে পারেনা। জনগণের সুখ ও দুঃখের বিচার বিশ্লেষণ সর্বদা রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। এসব বিষয়ে অবহেলা দূর্বলতা প্রকাশ পেলে রাষ্ট্রের শৃংখলা ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই উঁচু থেকে নিচু ছোট থেকে বড় ধনী থেকে গরীব সব শ্রেণী পেশার মানুষ যেনো আত্মমর্যাদার সাথে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সেটায় সরকারের দায়িত্ব হওয়া উচিত। সরকারকে এসব বিষয় চিন্তায় রেখে মানুষের রুটি রুজির নিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে আসা জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক
মাহমুদুল হক আনসারী
সংগঠক,গবেষক,কলামিষ্ট