spot_img

১৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বুধবার
২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

পণ্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং পবিত্র রমজান প্রসঙ্গে

কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ পরিচিত কিন্তু বাংলাদেশ নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। মাছে-ভাতে বাঙ্গালীর নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য আমদানী করতে হয় বিভিন্ন দেশ থেকে। বছরের প্রায় সময়েই অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের মুনাফালোভী মানসিকতার কারনে চড়ামূল্যে পণ্যদ্রব্য কিনতে হয় যা স্বাভাবিক বাজার দরের চেয়েও দেড় থেকে দুইগুণ বাড়তিমূল্য হয়ে যায়। গত দুই বছরের মধ্যে পেঁয়াজ, আলু ও লবনের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ঘটনার পর এখন সকল পণ্যেরই মূল্য বৃদ্ধি হয়ে দরিদ্র নাগরিকদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। করোনাকালীন সময়ে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নেই কোন মাথাব্যথা, দাম কমার বিষয়েও সঠিক কোন তথ্য নেই কারো কাছে।

সরকারের কাছে মানুষের বহু প্রত্যাশার মধ্যে অন্যতম প্রত্যাশা হলো দ্রব্যমূল্যের স্বাভাবিক মূল্য বজায় রাখা। কিন্তু ভোক্তাদের পাশাপাশি সরকারকেও সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হতে দেখা যায়। যার ফলে বর্ধিত মূল্যে মাসের পর মাস পণ্য বিক্রি হলেও সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে না। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য কৃষকদের প্রয়োজনে ভতুর্কি দিয়ে হলেও দেশের মানুষের পূর্ণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানী করার মতো খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনের বিষয়ে আশানুরূপ কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায় না। অথচ দেশব্যাপী লক্ষ লক্ষ বিঘা জমি পরে থাকে চাষহীন। কৃষকরাও উৎপাদিত পণ্যের প্রত্যাশানুরূপ মূল্য না পেয়ে কৃষি কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যার কারনে কৃষি প্রধান দেশ হলেও বিদেশ নির্ভর হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির ফলে বাজারে অস্থিরতা চলাকালীন সময়েই সংযম ও আত্মশুদ্ধির পবিত্র মাহে রমজানের আগমন ঘটেছে। পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মূল্য কিছুটা হলেও কমবে, আমরা এমন ধারণা করলেও আমাদের আশাভঙ্গ হয়েছে। রমজান আগমনের পরও কোন পণ্যের দাম কমেনি, বরং কোন কোন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ইফতার তৈরীর আইটেম সমূহের দাম পূর্বের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা রমজান মাসে নাগরিকেরা স্বাভাবিক মূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার স্বপ্ন দেখলেও বিগত বছরগুলোর মতো এবারও একই অবস্থা। অথচ অন্যান্য মুসলিমপ্রধান দেশগুলো কিংবা অনেক অমুসলিম দেশেও মুসলিম ব্যবসায়ীদের চিত্র বেশ ভিন্ন। তারা বছরের ১১ মাস ব্যবসা করে পবিত্র রমজান মাসকে ইবাদাতের মাস হিসেবে নামাজ, রোজার বাহিরেও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি না করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝে রাখে। রমজানের মূল স্পিরিট সংযমকে বাস্তবায়ন করে কাজে কর্মে। বিপরীতে আমাদের দেশে রমজানকে টার্গেট করা হয় আয় রোজগারের জন্য। যেনো ১১ মাস তারা লোকসান গুনেছে, তাই রমজানেই সব সুদে আসলে পূরণ করতে হবে।

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নাগরিকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে থাকলে, পণ্যমূল্যের দাম আয়ের তুলনায় সমান হারে বাড়বে, তা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু মানুষের আয় না বাড়লেও নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে চরম ভোগান্তিতে নাগরিকরা। শুধু খাদ্যপণ্যই নয়, কাপড়, নির্মাণ সামগ্রী, ক্রোকারিজ সহ সবধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে অস্বাভাবিক বর্ধিত মূল্যে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় মধ্যবিত্তদের। আয়ের সাথে খরচের সামঞ্জস্য না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে পতিত হতে হয়।

নাগরিকরা খাদ্যকষ্টে ভুগলে কিংবা খাদ্য দূর্ভোগে পতিত হলে এর দায়ভার সরকারের উপরই বর্তায়। সেই সাথে দেশের নাগরিক হিসেবে ব্যবসায়ীদেরও দায় আছে, দায়িত্ব আছে সাধারণ নাগরিকদের প্রতি। এছাড়াও মুসলিম প্রধান হিসেবে পবিত্র রমজান মাসে পণ্যের দাম কমার বিপরীতে বেড়ে যাওয়া কাম্য নয়, মুসলিম ব্যবসায়ীদের রমজানের মূল স্পিরিট বাস্তবায়ন করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কৃষি প্রধান দেশের নাগরিকরা অস্বাভাবিক মূল্যে কৃষি পণ্য ক্রয় করবে, তা কাম্য হতে পারে না।

জুবায়ের আহমেদ
তরুণ লেখক

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss