বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন হচ্ছে আজ ২৮ অক্টোবর। বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই টানেল উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে নানাভাবে সফল, সার্থক ও ঝাঁকজমকপূর্ণ একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান সফল করার জন্য চট্টগ্রাম জেলার সরকারি দপ্তরসমূহ ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিরবচ্ছিন্নভাবে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কাজ করছে। সব ধরনের সেবা সংস্থাসমূহ ওই অনুষ্ঠানকে সফল ও সার্থক করার জন্য কাজ করছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, অঙ্গ সংগঠনসমূহ ও সামাজিক সংগঠনসমূহ ২৮ অক্টোবরের প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সর্বাত্মকভাবে সফল করতে মাঠে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ, অঙ্গ সংগঠনসমূহ, প্রতিটি থানা, উপজেলা, নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পথসভা, মিছিল ও মিটিং এবং সমাবেশ করতে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজ নিজ এলাকায় জনসভায় ব্যাপকভাবে উপস্থিতির জন্য দলীয় কর্মীদের সংগঠিত করছে। আশা করা যাচ্ছে, প্রতিটি উপজেলা থেকে লাখ লাখ জনসাধারণ উপস্থিত করে প্রধানমন্ত্রীকে চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। চট্টগ্রামের অলিগলি, মার্কেট, বাজার ও আদালত পাড়ায় এখন একটি শুধু কথা বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এই টানেলকে নিয়ে আনন্দ উলস্নাস দেখতে পাচ্ছি। চট্টগ্রামের জনগণ খুশিতে আত্মহারা।
কিছু কথা এখানে লেখক হিসেবে না বললে হয় না। আনোয়ারা পটিয়া কর্ণফুলী এলাকার মধ্যেই এই টানেলটি। এই এলাকাটি টানেলের কাছাকাছি। টানেল ব্যবহারের জন্য এই এলাকাটি ব্যবহার হবে। এরপর টানেলের গাড়িগুলো বিভিন্ন উপজেলায়, হাইওয়ে রোডে প্রবেশ করবে। বাঁশখালী উপজেলাটি এখন দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। এই উপজেলা হয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া মহেশখালী বদরখালীর হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। শত শত প্রাইভেট ও গণপরিবহণ দিন-রাত চলাচল করছে। এস আলম, সাউদিয়াসহ বিভিন্ন কোম্পানির গণপরিবহণের বড় বড় এসি গাড়ি বাঁশখালী উপজেলা হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত যাচ্ছে। ফলে ওই রাস্তায় অহরহ সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। সড়কটি সেই পুরনো আমলের সড়কেই রয়েছে। কয়েক ডজন বাজার সড়কের উপর। গরু ছাগলের বাজার মার্কেট অনেক জায়গায় রাস্তাকে গ্রাস করে রেখেছে। সড়কটি ফোর লাইন করার পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়েছে কিনা জানা নেই। স্থানীয় জনগণ সড়কটি বড় করার দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। স্থানীয় এমপি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেছেন কিনা আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন, সেহেতু স্থানীয় জনগণ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বাঁশখালী সড়কটির বড় করার ঘোষণা শুনতে চায়।
বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার উন্নয়নের মতো চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নে এই অঞ্চলের চেহারা পাল্টে গেছে। ফলে এই অঞ্চলের জনগণ সরকারের প্রতি আন্তরিক ও সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী যতবারই চট্টগ্রামে এসেছেন সব বক্তব্যে তিনি চট্টগামের প্রতি বিশেষভাবে আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। ফলে চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খুবই খুশি।
উলেস্নখ্য, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল উদ্বোধনের পরদিনই টানেলের ভেতরে যান চলাচল সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত এক প্রস্তুতি সভায় সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন এ কথা জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন এই সভার আয়োজন করে।
সভায় জানানো হয়, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের পর আনোয়ারা প্রান্তে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘টানেল নিয়ে মিথ্যা বা নেতিবাচক প্রচারণা হতে পারে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। মিথ্যা নেতিবাচক প্রচারণা চালালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।’
সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘টানেলের মধ্যে জনসাধারণের জন্য নির্দেশনা ব্যবস্থা থাকবে এবং সেখানে ৮টি রেডিও চ্যানেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দেশনাগুলো চলতে থাকবে। টানেলের ভেতর যেই ফ্রিকুয়েন্সি থাকুক না কেন, গাড়ি যতক্ষণ টানেলে থাকবে ততক্ষণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ দিক নির্দেশনা চলবে।’
‘টানেলে কোন গাড়ি চলতে পারবে এবং কোনটি চলতে পারবে না সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টোল হার নির্ধারণ হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে- যা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
পুলিশের পক্ষ থেকে টোল মওকুফের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী গাড়ি বহর নিয়ে যাওয়ার সময় টোল দেন। এখানে টোল অব্যাহতির কোনো সুযোগ নেই। তবে যারা অন কল বা অন ডিউটিতে ইমার্জেন্সিতে থাকবে তাদের টোল দিতে হবে না।’
দেশের প্রথম টানেলের নামকরণ করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চীনের চায়না কমিউনিকেশনস, কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসিএল) লিমিটেড। টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। নগরের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক রয়েছে। চট্টগ্রামবাসীর অপেক্ষা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে বাস্তবে বাণিজ্যিক রাজধানীর ঐতিহাসিক একটি পদক্ষেপ পূরণ করতে যাচ্ছেন।
এই টানেলের মাধ্যমে সারাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই চট্টগ্রামের মানুষ টানেলের প্রাপ্তিতে আনন্দ ও খুশিতে আত্মহারা।
মাহমুদুল হক আনসারী : সংগঠক ও কলামিস্ট
চস/আজহার