গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)’র চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। মানুষ বাকরুদ্ধ, এই জাতীয় মুক্তি মঞ্চের মাধ্যমে মানুষকে জাগ্রত করতে হবে। প্রতিটি বিভাগ এবং বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষের মাঝে গণসচেতনা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। বড় লোকের জন্য কোন বিচার ব্যবস্থা নেই, আছে গরিবদের জন্য। তিনি দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইয়ে আনতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীক।অলি আহমদ বলেন, দেশে এখন টাকা থাকলে সব রকম অন্যায় করে পার পাওয়া যায়। নেতা হওয়া যায়, মন্ত্রীও হওয়া যায়। দেশের অর্থনীতি চরম সংকটে। অবৈধ সংসদে উত্থাপিত বাজেট এর উদাহরণ। ভীতিকর সংকটময় এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ সরকারের দায়বদ্ধতা নেই। ছয় মাসের মধ্যে অর্থনীতিতে ধস নামতে পারে এমন আশঙ্কা করে সাবেক মন্ত্রী অলি আহমদ বলেন, দেশে যত টাকা আছে তার ৪০ শতাংশ বাইরে চলে গেছে। এত বড় প্রকল্প কিভাবে বাস্তবায়ন করবে? এত ঋণ কিভাবে শোধ করবে?
অলি আহমদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হলে দেশ ও জাতি মুক্ত হবে। আমাদের স্লোগান হবে- জাতিকে মুক্ত কর। এই মুক্ত করা বাংলাদেশকে সঠিকভাবে দুর্নীতিমুক্ত পথে পরিচালিত করার জন্য। বেগম খালেদা জিয়া যে রোগে আক্রান্ত তিনি কারাগারে মারাও যেতে পারেন। সে রকম কিছু হলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে। এজন্য বদনাম হবে সরকারের। দেশের প্রতিটি জেলায় এই দুই দাবিতে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে অলি আহমদ বলেন, কে আসল কে আসল না, সেটা বিবেচ্য নয়। কোনো দলের ওপর আমরা নির্ভরশীল নই। পাকিস্তানে অনেক বড় বড় দল ছিল। কিন্তু ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হন। জাতিকে বুঝতে হবে। কাউকে আকড়ে ধরে থাকলে চলবে না। দেশে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চলছে দাবি করে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র মেনে নিতে পারি না। বাংলাদেশে এটা চলছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা বিসর্জন দিব না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে সবাইকে ঘরে বসিয়ে রাখব, আর একা ভোট ডাকাতি করবো, এটা নয়। আশাকরি জনগণ ও সকল বিরোধীদল আমাদের সমর্থন করবে।
সভায় অলি আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে একনায়কতন্ত্র নয়। এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে দেশে একনায়কতন্ত্রের শাসন চলছে। সরকার ভুল পথে আছে, তাদেরকে বুঝাতে হবে। বিচারপতিদের মাধ্যমে দেশের সমস্যা চিহ্নিত করে উত্তরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। দুদককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। দুর্নীতি পেলে প্রয়োজনে যতই ক্ষমতাবানই হোক তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করতে হবে। মুক্তি মঞ্চকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সমর্থন দিয়েছেন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি, না পুনরায় নির্বাচন, প্রয়োজনে আগে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে হবে।
এ সময় তিনি পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ ১৮ দফা দাবি উপস্থাপন করে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে আটক রেখেছেন সরকার। ঐক্যফ্রন্টের নামে সরকার দলীয় কিছু দালাল দিয়ে নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মধ্যরাতে হওয়ায় তা বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোন ভোট হয়নি। জাতিকে মুক্ত করতে এই মুক্তি মঞ্চ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
সভায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, আমরা ২০ দলীয় জোটে ছিলাম, আছি, থাকবো। ২০ দলীয় জোট আমাদের। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া শিমুলের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, জাগপা’র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এড. সৈয়দ এহেসানুল হুদা, উত্তর জেলা এলডিপি’র সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল আলম তালুকদার, এলডিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাদাত হোসেন সেলিম, দক্ষিণ জেলা এলডিপি’র সভাপতি এড. কফিল উদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এমপি ইসমাইল হোসেন বেগল, মহানগর কল্যাণ পার্টি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছ, বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম, দক্ষিণ জেলার কল্যাণ পার্টির সভাপতি এড. মোয়াজ্জেম হোসেন, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক এস. এম নিজাম উদ্দিন হারুন, উত্তর জেলার সহ-সভাপতি ফজলুল কাদের, জাগপা মহানগরের সভাপতি আবু মোজাফফর মো. আনাছ, রাঙামাটির এলডিপি’র সভাপতি দীপঙ্কর দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ দিদারুল আলম প্রমুখ।