spot_img

১৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বুধবার
২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

‘শুকনো জায়গায় মাকে কবর দিও’ লিখে ভাসানো হলো লাশ

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জবাসী। শুধু বসতঘরই নয়, যেখানেই চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। কোথাও একটুকু শুকনো জায়গা নেই। তাইতো নিরুপায় হয়ে ‘শুকনো জায়গায় মাকে কবর দিও’ চিরকুট লিখে এক মায়ের লাশ ভেলায় ভাসিয়ে দিয়েছেন ছেলে। কোনো সহৃদয় ব্যক্তি লাশ পাওয়ার পর তার মায়ের দাফনের ব্যবস্থা করবেন এমনটাই আশা তার।

গত রোববার (১৯ জুন) বন্যাদুর্গত সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি কাশমির রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‌‌‘রোববার সকালে আমরা একটি সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর এলাকার টাঙ্গুয়ার হাওরে সারাদিন ঘুরে ত্রাণ বিতরণ ও বন্যার চিত্র পরিদর্শন করি। আমাদের নৌকা বিশ্বম্ভরপুর হাওরের ভাতের টেক আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক সেই দৃশ্য চোখে পড়ে। আত্মীয়-স্বজন কলার ভেলায় করে একটি লাশ পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন! সেই লাশের সঙ্গে একটি চিরকুট দেওয়া হয়েছে। তাতে মায়ের লাশ দাফনের জন্য ছেলে আকুতি জানিয়েছেন।’

এদিকে, লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার আরও একটি ঘটনার কথা জানিয়েছেন তাহিরপুরের দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ। তিনি বলেন, ‘নয় নগর গ্রামের রেণু মিয়ার দুই বছরের ছেলে আলামিন বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়। শুকনো জায়গায় কবর দিতে না পেরে মা-বাবা পানিতে ছেলের লাশ ভাসিয়ে দেন।’

হাওরে অমানবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে জানিয়ে হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, ‘মানুষ দাঁড়ানোর মতো এক ইঞ্চি শুকনো জায়গাও নেই। এর মধ্যে দুর্গত অনেক এলাকায় এখনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। মধ্যনগর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, শাল্লা এলাকা খুবই দুর্গত। ওইসব এলাকায় যাতায়াত খুবই কষ্টকর, তাই লোকজন সেখানে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন না। আর একশ্রেণির নৌকার মাঝি সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা এক হাজার টাকার জায়গায় ১০ হাজার টাকা নিচ্ছেন। ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ নৌকার মাঝিদের নৈরাজ্য দূর করতে প্রশাসনের তদারকি বৃদ্ধি করা জরুরি।’

এ প্রসঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাবিউর রহিম জাকির বলেন, ‘আমার উপজেলার ৯০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখানে কবরস্থানগুলো তলিয়ে গেছে। লাশ দাফনে বিড়ম্বনা সৃষ্টি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এটাই স্বাভাবিক।’

জানতে চাইলে তাহিরপুরের ইউএনও মো. রায়হান কবির বলেন, ‘আমার এলাকায় সবকটি ইউনিয়ন ও গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কবরস্থানগুলো তলিয়ে গেছে। লাশ দাফন না করে ভাসিয়ে দেওয়ার তথ্য আমাদের কাছে নেই।’ তবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। সূত্র: আমাদের সময়

চস/স

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss