মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করার অংশ হিসেবে এইচ-১বি ভিসা আবেদনকারীদের জন্য বার্ষিক ১ লাখ ডলার (প্রায় ৮৮ লাখ রুপির বেশি) ফি ধার্য করার একটি ঘোষণা স্বাক্ষর করেছেন। এই সিদ্ধান্ত বিশেষত প্রযুক্তি খাতে বড় ধাক্কা দিতে পারে, যেখানে ভারত ও চীনের দক্ষ শ্রমিকদের ওপর নির্ভরতা অনেক বেশি।
ট্রাম্প জানান, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো এমন মানুষদের যুক্তরাষ্ট্রে আনা, যারা ‘বাস্তবিকভাবে অত্যন্ত দক্ষ’ এবং যারা আমেরিকান কর্মীদের বাজার দখল করবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের শ্রমিক দরকার। আমাদের ভালো শ্রমিক দরকার, এবং এই পদক্ষেপ সেই বিষটিই নিশ্চিত করবে।’
হোয়াইট হাউসের স্টাফ সচিব উইল শারফ বলেন, এইচ-১বি অ-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা প্রোগ্রাম বর্তমান অভিবাসন ব্যবস্থায় ‘সবচেয়ে বেশি দূর্ব্যবহৃত ভিসা’। তিনি বলেন, ‘এই ঘোষণার মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে এইচ-১বি আবেদনকারীদের স্পন্সর করার ফি ১ লাখ ডলার করা হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে, তারা যারা আনছে তারা সত্যিই অত্যন্ত দক্ষ এবং আমেরিকান শ্রমিক দ্বারা প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়।’
এইচ-১বি ভিসা কী?: এইচ-১বি ভিসা হলো একটি অস্থায়ী যুক্তরাষ্ট্র কর্ম ভিসা, যা বিদেশী পেশাদারদের নিয়োগের সুযোগ দেয়, যারা বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন। এটি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বিশেষত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত ক্ষেত্রে যেখানে কাজ পাওয়া কঠিন।
ভিসাটি প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য দেওয়া হয়, যা সর্বোচ্চ ছয় বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়। যারা গ্রিন কার্ড (স্থায়ী বাসস্থান) পেয়েছে, তারা এই ভিসা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত নবায়ন করতে পারে। আবেদনকারীরা অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবার মাধ্যমে নিবন্ধন করেন, এবং এরপর লটারির মাধ্যমে অযাচিতভাবে আবেদনকারীদের নির্বাচন করা হয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসন আবেদন প্রক্রিয়ায় আরও পরিবর্তন নিয়ে ভাবছে।
এই ভিসা পাওয়ার পর বিদেশীরা আমেরিকান সহকর্মীদের সমান বেতন ও কাজের পরিবেশ পাবেন।
ভারতের ওপর প্রভাব: ভারত নিয়মিত এইচ-১বি ভিসার অধিকাংশ সুবিধাভোগী দেশ হয়ে আসছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অনুমোদিত এইচ-১বি ভিসার ৭১ শতাংশ ভারতীয় নাগরিক পেয়েছেন, আর চীনের অংশগ্রহণ ছিল ১১.৭ শতাংশ।
২০২৫ সালের প্রথমার্ধে, আমাজন ও তার ক্লাউড ইউনিট এডব্লিউএস ১২,০০০-এর বেশি এইচ-১বি ভিসার অনুমোদন পেয়েছে। মাইক্রোসফট ও মেটা প্ল্যাটফর্মসের প্রত্যেকের অনুমোদিত ভিসার সংখ্যা ৫,০০০-এর বেশি।
তবে ট্রাম্পের নতুন ফি প্রবর্তনের পর, ভারতীয়দের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া আরও জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করা হলেও অপেক্ষার সময় দীর্ঘ এবং এই সময়ে ভিসা নবায়নের জন্য প্রতি বার ৮৮ লাখ রুপির বেশি খরচ করতে হবে।
সাথে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পরীক্ষার জন্য আরও কঠোর পরীক্ষা চালু করা হবে। ট্রাম্প এর আগে ২০২০ সালে এটি প্রবর্তন করেছিলেন, তবে পরে জো বাইডেন প্রশাসন এটি বাতিল করে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী আবেদনকারীদের ১২৮টি প্রশ্নের মধ্যে ২০টি মুখে উত্তর দিতে হবে এবং কমপক্ষে ১২টি সঠিক উত্তর দিতে হবে।
ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা প্রোগ্রাম: ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেছেন ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা প্রোগ্রামের জন্য, যেখানে ব্যক্তির জন্য ফি ১০ লাখ ডলার এবং ব্যবসায়ের জন্য ২০ লাখ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি খুব সফল হবে। এটি কোটি কোটি ডলার সংগ্রহ করবে, যা কর কমাতে, ঋণ পরিশোধ করতে এবং অন্যান্য ভালো কাজের জন্য ব্যবহার হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, ‘গোল্ড কার্ড’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে শুধুমাত্র ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ের অসাধারণ মানুষদের’ যুক্তরাষ্ট্রে আসার অনুমতি দেওয়া হবে, যারা আমেরিকানদের জন্য ব্যবসা এবং চাকরি তৈরি করতে পারবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, চাকরিভিত্তিক গ্রিন কার্ড প্রোগ্রাম ‘তর্কবিরোধী’, কারণ এটি মূলত বার্ষিক ২,৮১,০০০ মানুষের মধ্যে নীচের চতুর্থাংশকে অনুমোদন দিত, যারা বছরে মাত্র ৬৬,০০০ ডলার উপার্জন করত এবং সরকারের সহায়তা প্রাপ্ত হবার সম্ভাবনা পাঁচগুণ বেশি ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা একমাত্র দেশ যেখানে নীচের চতুর্থাংশ মানুষকে নেওয়া হতো। আমরা এটি বন্ধ করতে যাচ্ছি।’
চস/স