spot_img

৮ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজহার মাহমুদ

সর্বশেষ

সুন্দরবন দিবস : আসুন সুন্দরবনকে ভালোবাসি

সুন্দরবন বাংলাদেশের প্রশস্ত বনভূমি। এই বন বিশ্বের এক অপার বিস্ময়। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। সুন্দরবনকে বলা হয় বাংলাদেশের ‘প্রাণ’। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ২০০১ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। যদিও ১৪ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসের আড়ালে হারিয়ে যায় এই গুরুত্বপূর্ণ দিবসটি। ভালোবাসা দিবসকে যতটা উত্সাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে পালন করা হয়, সুন্দরবন দিবসকে করা হয় ততটাই অবহেলা! অনেকে জানেনই না দিবসটির কথা! অথচ দেশের অহংকার সুন্দরবনকে সবার ভালোবাসার কথা, স্মরণে রাখার কথা!

সুন্দরবনে রয়েছে ৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩০ প্রজাতির চিংড়ি মাছ। এর বাইরে এই বন অজস্র উদ্ভিদ-প্রাণিকূলের আশ্রয়স্থল; কিন্তু বনখেকোদের ক্রমাগত আগ্রাসনের কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে। সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ গোটা দেশের পরিবেশ। অথচ একটি অসাধু গোষ্ঠী সুন্দরবনকে নিংড়ে নিচ্ছে একটু একটু করে! এই ‘সুন্দর’ বনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারাটা আমাদের চরম ব্যর্থতা। সবার উদ্দেশে বলতেই হয়, নামমাত্র সুন্দরবন দিবস পালন কিংবা নিছক বইয়ের পাতায় সুন্দরবন নিয়ে লেখালেখি থাকলেই চলবে না। বরং সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বাঁচাতে, সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশকে বাঁচাতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকেও এ ব্যাপারে আরো তৎপর হতে হবে। চোরাকারবারি, পশুপাখি শিকারি, ভূমিদস্যুদের তাণ্ডব থেকে সুন্দরকে বাঁচাতে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। মনে রাখতে হবে, শুধু সেমিনার, আলাপ-আলোচনা, সভার মধ্যে ‘সুন্দরবন রক্ষা’র বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখলে কখনো এই বনকে রক্ষ করা যাবে না। এজন্য সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ তো গ্রহণ করতেই হবে, পাশাপাশি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনের তাৎপর্য প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে সচেতন করে তুলতে হবে।

বাস্তবতা হলো—বনের প্রতি কিছু মানুষের অতিনির্ভরতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বনের প্রতি মানুষের নির্বিচার আচরণও। এর অভিঘাতে ক্রমাগত বিপন্ন হচ্ছে সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ। গত ১৯ বছরে ৩১ বার আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। পুড়ে গেছে প্রায় ১০০ একর বনভূমি। এসব অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়েছে একরের পর একর বনভূমির গাছপালা, লতাগুল্ম। মারা গেছে বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু। আবাসস্থল হারিয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। কী মর্মান্তিক বিষয়!

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই আগুন একা একা লাগতে পারে না। প্রতি বছর কেবল একটা নির্দিষ্ট সময়েই এই আগুন লাগানো হয়—চিন্তার বিষয় বটে! অভিযোগ আছে, বনের মধ্যখানে জলাশয়ে মিঠা পানির মাছ ধরতেই এই আগুন লাগায় সেখানকার কিছু মানুষ। এতে করে সঙ্গে সঙ্গে বনের আশপাশের এলাকারও যে কী পরিমাণে ক্ষতি হয়ে যায়, সচেতন ব্যক্তিমাত্রই তা আন্দাজ করতে পারেন। এসব বিষয় জানার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন!

জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় মারাত্মক হুমকির মধ্যে আছে আমাদের সুন্দরবন। এমতাবস্থায় সুন্দরবনকে বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি তথা টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে সব শ্রেণির মানুষকে। মনে রাখতে হবে, সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। দেশ বড় বড় ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পায় শুধু এই সুন্দরবন থাকার কারণে। তা না হলে এসব ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ত বাংলাদেশের বুকে। তাই আসুন, সুন্দরবনকে বাঁচাতে আমরা সবাই সজাগ হই। সুন্দরবন তথা দেশের পরিবেশকে বাঁচাই।

 

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss