spot_img

১৩ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, সোমবার
২৭শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন আবুল কালাম

শিক্ষার কোনো বয়স নেই। এই কথাটি যেন আরেকবার প্রমাণ করেছেন আবুল কালাম আজাদ। নিজের শেষ ইচ্ছা পূরণে জীবনের সায়াহ্নে এসেও তিনি বসতে যাচ্ছেন পরীক্ষার আসনে।

আবুল কালামের বয়স এখন ৬৭ বছর। তার বাড়ি শেরপুর জেলার শ্রীবরদীর খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের লংগরপাড়া গ্রামে। পরিবারের অনটনের কারণে নিজে তেমন পড়ালেখা করতে না পারলেও নিজের তিন ছেলেকে বানিয়েছেন উচ্চ শিক্ষিত। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলেকে ইংরেজির শিক্ষক, মেজো ছেলেকে কামিল পাশ ও ছোট ছেলেকে বানিয়েছেন প্রকৌশলী। তার এমন আগ্রহে পড়ালেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার তরুণরা।

জানা যায়, লংগরপাড়ার মৃত আব্দুল রশিদ মন্ডলের ছেলে আবুল কালাম আজাদ। ১৯৭৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। আর্থিক অনটনের কারণে পরীক্ষা না দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। থাকেন ২২ বছর। ঢাকায় থেকে বিয়ে করেন তিনি। তারপর চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে দীর্ঘ ১৮ বছর প্রবাস জীবন কাটান। এরপর বাড়ি ফেরে মন দেন লেখালেখিতে। লেখেন নানা কবিত ও ছড়া। এ ছাড়া অসংখ্য গান ও উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। প্রকাশ পেয়েছে দুটি কবিতার বইও।

আবুল কালাম আজাদ জানান, ছোট থেকেই তার ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ায় অভাবের কারণে পড়তে পারেন। পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চলে আসনে ঢাকায়। এখানে এসেও পড়ালেখা করতে চেয়েছেন। নানা কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। পরে ঢাকা থেকে সৌদি আরব চলে যান। ১৮ বছর থাকেন প্রবাসে। সেখান থেকে ফিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সাংসারিক কাজে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ২৭টি কবিতা লিখেছি। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাঁচটি কবিতা লিখেছি। আমার লেখা কবিতাগুলো প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছানোর সুযোগ চাই। দেশের উন্নয়ন নিয়েও আমি কবিতা লিখেছি।’

শেষ বয়সে ছেলেদের সহযোগিতায় শুরু করেছেন পড়ালেখা। এবার তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

নতুন করে পড়ালেখা করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কালাম বলেন, ‘এলাকার অনেকেই প্রথম হাসাহাসি করলেও এখন আর কেউ এমন করে না। আর শিক্ষার কোনো বয়স নেই। মহানবী (সা.) শিক্ষা গ্রহণের সুদূর চীন দেশে যেতে হলেও যেতে বলেছেন। তাই আমি আমার ইচ্ছাটা শেষ বয়সে হলেও পূরণ করতে চাই।’

আবুল কালামের মেজো ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের তিন ভাইকে পড়ালেখা করিয়ে ভালো চাকরির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। তার নিজের ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। আমরা এখন তার ইচ্ছাপূরণের জন্য কাজ করছি। বাবার যতটুকু পড়তে মন, চায় আমরা পড়াব।’

পড়ালেখা না করেও কবিতার বই প্রকাশ করে ও শেষ বয়সে পড়ালেখা শুরু করে এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছেন আবুল কালাম আজাদ। এ খবরে তারা যেমন খুশি, তেমনি লেখাপড়াতেও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অনেকে।

খাইরুল নামের এক তরুণ বলেন, ‘আমরা তরুণ বয়সেও পড়ালেখা করতেই চাই না। আর কামাল দাদা বৃদ্ধ বয়সে পড়ালেখা করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। তার মাধ্যমে আমরাও পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হব।’

রতন মিয়া নামে আরেকজন বলেন, ‘আমরা তো খুব খুশি আমাদের চাচা শেষ বয়সে পড়ালেখা করছেন। তার কবিতাও আমরা তার কাছ থেকে শুনি। খুব ভালো লাগে কবিতাগুলো।’

খড়িয়াকাজীরচর ইউপির চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া বলেন, ‘গ্রামে তিনি কবি কালাম নামেই পরিচিত। তিনি যে শেষ বয়সে এসে ধৈর্য ধরে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন, এতে আমরা খুব খুশি।’

সূত্র: দৈনিক বাংলা অনলাইন

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss