বাংলাদেশের প্রবাসী এলাকা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত সিলেট জেলা। সিলেটকে আবার কেউ কেউ বলেন দ্বিতীয় লন্ডন। গেল ছয় ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ নাগাত সর্বমোট ৪৪ দিনে বিভিন্ন দেশ থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বিভাগের ছয়টি স্থলবন্দর দিয়ে সিলেটে প্রবেশ করেছেন প্রায় ২৬ হাজার মানুষ। বিমানবন্দরে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলা হলেও বিভিন্ন দেশ থেকে আশা এসব ব্যক্তিদের সিংহভাগই কোয়ারেন্টিনের বাইরে।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ১২০০ জনকে রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টিনে। আর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সিলেট সামসুদ্দিন হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে মাত্র দু’জনকে।এ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন ১১ জন। তবে কোয়ারেন্টিনে থাকা বিদেশফেরতদের মাধ্যমে সিলেটে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন অনেকেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, গেল ছয় ফেব্রুয়ারি থেকে ওসমানী বিমানবন্দর এবং সিলেটের তামাবিল, সুতারকান্দিসহ ছয়টি স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে আগতদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের অধীনে এ পর্যবেক্ষণ কাজ চলছে তবে এখনও পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সিলেট বিভাগে প্রবেশ করেছেন ২৬ হাজার ৫০৩ জন। এদের সিংহভাগই প্রবাসী। কেউ কেউ ভারতে ঘুরতে গিয়েছিলেন, তারাও ফিরেছেন। আবার বিমানপথে ঢাকা থেকে এসেছেন কিছু মানুষ। এছাড়া বিদেশফেরতদের এই সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা, বিভিন্ন দেশ থেকে যারা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে সিলেটে এসেছেন তাদের হিসাব এখানে যুক্ত নয়।
আরো পড়ুন: করোনা নিয়ে দুই পক্ষের তর্ক-সংঘর্ষ, একজন নিহত
এদিকে, এতো বিপুলসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরলেও গত কয়েকদিনে সিলেট বিভাগে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে মাত্র এক হাজার ২১৫ জনকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গেল ১০ মার্চ থেকে হোম কোয়ারেন্টিনের হিসাব রাখা হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় ৫৭৮ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ৪৩ জন, মৌলভীবাজার জেলায় ২১৬ জন এবং হবিগঞ্জে ৪৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।সিলেটের বিভিন্ন এলাকার নাগরিকরা বলছেন, কোয়ারেন্টিনের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া যাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে, তাদের অনেকেই তা মানছেন না। বিদেশফেরত এসব ব্যক্তিরা ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে ভাইরাসের সংক্রমণের শঙ্কা অনেক বেশি।
সিলেটে বিদেশফেরত ব্যক্তিরা আদতেই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন কিনা, তা দেখতে কাল বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা প্রশাসনের পাঁচটি টিম মাঠে নামে। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যক্তিকেই তারা কোয়ারেন্টিনে দেখতে পায়নি। আজ শুক্রবারও জেলা প্রশাসনের সাতটি টিম পর্যবেক্ষণে নেমেছিল। কিন্তু আজকের চিত্রও সুখকর ছিল না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. দেবপদ রায় বলেন, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে আমরা খোঁজ রাখছি।যারা আক্রান্ত দেশ থেকে বাংলাদেশ তথা সিলেটে এসেছেন, তারাই আসলে আমাদের জন্য বিপদ। তাদেরকে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, তারা যাতে বাইরে বের না হন, কারো সঙ্গে যাতে না মিশেন।এরপরও যদি কেউ সচেতন না হন তবে আমরা জেলা প্রশাসন পুলিশ সবাই সিলেট কঠোর হব।
অপরদিকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, প্রবাসী যারা দেশে এসেছেন তারা যদি আইন না মানে সেক্ষেত্রে তাদেরকে করা আইন মানানো স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ না সেক্ষেত্রে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে প্রত্যেক প্রবাসী বিদেশ থেকে আশার পর তার রিপোর্ট থানা পুলিশের কাছে থাকতে হবে এবং প্রবাসীরা কোথায় যায় কার সঙ্গে মিশে সেটা মনিটরিং করতে হবে পুলিশকে।
সিলেট এম এজি ওসমানি মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুসুর রহমান , ইতোমধ্যে সিলেট নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট শামসুদ্দিন হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি হলে যতটুকু কাজ করার ততটুকু করব। আমরা প্রত্যেকটা বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় মিটিং করছি। সবার সহযোগিতায় অবশ্যই আমরা করোনাকে মোকাবেলা করব। অবশ্য সেক্ষেত্রে সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার আহ্বান জানান।
চস/আজহার