নিয়ন্ত্রণের কথা বলতে গিয়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কথা চলে এলো। আসলে নিয়ন্ত্রণে কোনটা আছে? না আছে মানুষ, না আছে করোনাভাইরাস। কিন্তু এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো বিষাদে বিষাদে দিন কাটাচ্ছে। না পারছে কাজ করতে, না পারছে ভিক্ষা করতে। এরচেয়েও বেশি যেটা পারছে না সেটা হচ্ছে না খেয়ে থাকতে। না খেয়ে থাকতে আমি আর আপনি কেউই পারবো না। এই রমজান মাসে হয়তো দুবেলা খাবে না, একবেলা খাবে। সেই একবেলার আহারও কি তাঁরা পাচ্ছে?
আসলে দিনশেষে আমরা তো আমাদের নিয়েই থাকি। অন্যের খোঁজ খবর নেওয়ার সময় কই! কথায় আছে, নিজে বাঁচলে বাপের নাম। এখন অবস্থাও তেমন দাঁড়িয়েছে। আমরা কেউই কারও খবর রাখি না, রাখার প্রয়োজনও মনে করি না। আমি খেতে পারলেই হয়েছে। এমন মনোভাব আমাদের ভেতর বাসা বেঁধেছে।
অবাক করার মতো বিষয় হলো, গতবছর করোনার সময় লকডাউনে মানুষের জন্য সরকার, বিত্তশালীরা আর্থিক ভাবে এবং খাবার দিয়ে সাহায্য করেছিলো। এবার তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না।
এই-যে করোনার নাম দিয়ে এসব মানুষগুলো অনাহারে, অপমানে, অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছে সেই খবর কি কেউ রাখছেন। সিএনজি ড্রাইভার, বাস চালক, রাজমিস্ত্রী, রেস্তোরাঁর ওয়েটার, মুচি, ফুটপাতের চটপটি ওয়ালা, বিরিয়ানি ওয়ালা, আরও নানান ধরনের লোক রয়েছে যাঁরা এভাবেই সংসার চালাতো তাদের কি অবস্থা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন?
এইযে প্রায় একমাসের মতো সময় লকডাউনে কাটছে এসব মানুষের জন্য সরকার, সমাজের বিত্তবানরা কি কিছু করতে পারছে না!
এধরনের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের এখনও পর্যন্ত কেউ কোনো ধরনের সহয়তা করেনি। তাঁরা এমন লকডাউন চায় না। না খেয়ে কষ্টের জীবন কাটানোর চাইতে খেয়ে-পড়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়াও অনেক ভালো বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।
এছাড়াও এক দিনমজুর বলেন, তাদের করোনা কখনও হবে না। তাদের জন্য করোনা আসেনি। তিনি না খেতে পারাকে যেভাবে ভয় করেন, করোনাকে সেভাবে করেন না।
এমন আরও অনেক খেটে খাওয়া মানুষের না বলা কথা রয়েছে। যা সরকারের কাছে কখনও পৌঁছাবে না। কিংবা পৌঁছালেও এর কোনো উত্তর তাঁরা পাবে না। কিন্তু সরকারের উচিত এসব মানুষদের খোঁজ নেওয়া। তাঁরা কেমন আছে সেটা জানা সরকারের দায়িত্ব। এসব মানুষের জন্য লকডাউন একটা ভয়ংকর বিষয়। হয়তো বিত্তবানদের জন্য এটা জরুরী। কিন্তু তাদের জন্য এটাও একটা মহামারী। করোনার চেয়ে বড় মহামারী।
তাই প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য কিছু করুন। তাদের পাশে থেকে লকডাউন কার্যকর করুন। পৃথিবী একদিন সুস্থ হবে, সুন্দর একটি সকাল হবে, যে সকালে সকলের মুখে থাকবে হাসি। সে পর্যন্ত সকলকেই সচেতন থাকতে হবে।


