spot_img

১৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

মায়ের জন্য ভালোবাসা থাকুক প্রতিদিন

মে মাসের ২য় রোববার বিশ্ব মা দিবস। প্রতিবছর এ দিনটি নিয়ে মানুষের আয়োজনের শেষ থাকে না। মনে হয় এই একদিনের জন্য সবাই মায়ের প্রতি ভালোবাসা জমিয়ে রাখে। সব মায়ের সম্মানার্থে এমন একটি দিন থাকাটা মন্দ কিছু নয়। তবে এর মানে এই নয় যে, শুধু এই দিনটিই মায়েদের জন্য; অন্য সময় আর মায়েদের খোঁজখবর রাখা হবে না। সারা বছর আমি যদি আমার মাকে অসম্মান, অশ্রদ্ধা করি, তাহলে এই একদিনে কি সেই কষ্ট মুছে ফেলা সম্ভব? আবার এই একদিন মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা প্রকাশ করে পরদিনই যদি মায়ের মনে আঘাত দেওয়া হয়, তাহলে এমন দিবস দিয়ে কী হবে?

প্রকৃতপক্ষে আজকের সমাজে এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে। অসুস্থ মাকে জঙ্গলে ফেলে আসছে, মারধর করছে কতিপয় সন্তান নামের কুলাঙ্গার। আজ অনেক মা বৃদ্ধাশ্রমে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ যেসব সন্তান তাদের মায়ের সঙ্গে এমন অন্যায় আচরণ করছে, তারাও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখবে ‘সব মাকে জানাই ভালোবাসা’, ‘সবাই মাকে ভালোবাসুন’ ইত্যাদি। এরকম অনেক লোকদেখানো মা ভক্ত এ সমাজে রয়েছে, যাদের আসল চেহারা সবাই জানেও না, দেখেও না। এ নিয়ে একটা বাস্তব গল্প আছে। আমার এক দূর সম্পর্কের চাচা রয়েছেন। আজ থেকে চার বছর আগে তার মা ইন্তেকাল করেন। যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই দেখতাম তিনি দাদিকে (তার মাকে আমি দাদি ডাকতাম) মারতেন।

আমি মাকে জিজ্ঞেস করতাম, কেন মারছে? মা বলতেন, তোর চাচির সঙ্গে ঝগড়া করেছে বলে। অর্থাৎ আমার চাচা নিজের স্ত্রীকে খুশি করার জন্য তার মাকে মারতেন! আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়তাম। মা মাঝে মাঝে আমাকে বলতেন, তোরাও আমাকে এভাবে মারবি বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া হলে। আমি তখন লজ্জা পেতাম। এখন ভাবি, মায়ের শরীরে কীভাবে সন্তান হাত তোলে! এটা তো মহাপাপ। যা হোক, কয়েক বছর পর কলেজে উঠলাম। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুললাম। কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামের অনেক আত্মীয়-স্বজন বন্ধু তালিকায় যুক্ত হয়ে গেল। বিষয়টা ভালো লেগেছে। দূরে থাকলেও তাদের দেখছি। একদিন দেখি সেই চাচাও মা দিবসে ফেসবুকে দাদির সঙ্গে ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘আমার মাকে আমি অনেক ভালোবাসি।’ আমি একটু অবাক হলাম। ভাবলাম, লোকটা কি ভালো হয়ে গেছে! কিন্তু গ্রামে বেড়াতে গিয়ে সেই ধারণাটা পালটে গেল। অন্যদের মুখে শুনলাম মাসে ৫-৬ বার দাদিকে নির্যাতন করেন চাচা। তার স্ত্রীও নাকি গায়ে হাত তুলতে শুরু করেছেন। এরপর যেদিন দাদি মারা যান তার পরের দিন চাচা ফেসবুকে পোস্ট দেন-‘মাগো এভাবে চলে গেলে, এখন আমি কার সেবাযত্ন করব?’ এমন পোস্ট দেখে আমি রীতিমতো অবাক। নিজের মায়ের মৃত্যুর পরও অনুশোচনা না করে, ক্ষমা না চেয়ে মানুষের কাছ থেকে সহানুভূতি নেওয়ার জন্য ফেসবুকে এমন পোস্ট দেওয়া মানুষগুলো সত্যি বড় প্রতারক। এমন বহু লোক এ সমাজে বসবাস করে।

তাই বছরে একদিন মাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া ও ছবি আপলোড করার চেয়ে প্রতিদিন মাকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা দিতে পারাটাই সার্থকতা বলে মনে করি। আসুন মায়েদের কষ্ট না দিয়ে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি সবসময়।

আজহার মাহমুদ : প্রাবন্ধিক

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss