spot_img

২৫শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কবে নিশ্চিত হবে?

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে গত ছয় বছর ধরে চলছে নানা ছিনিমিনি খেলা। আন্তর্জাতিক মহললের নির্লিপ্ততা, বিশ্ব নেতাদের অমনোযোগীতা ও জাতিসংঘ এখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি।

২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কর্তৃক রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর বর্বরোচিত গণহত্যা চালায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকার মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। এরই মধ্যে ছয় বছর অতিবাহিত হয়েছে, নানা নাটকীয়তার চাদরে মিয়ানমার ঢেকে দিচ্ছে বা দেওয়ার চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ইস্যু। মিয়ানমার সরকার সব সময় আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আন্তরিক ; কিন্তু তাদের বাস্তবিক পদক্ষেপ নানা নাটকীয়তায় ভরা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর ১৯ দফা সংবলিত একটি সমঝোতা দলিল স্বাক্ষরিত হলেও তার বাস্তবিক প্রতিফলন আজও রয়ে গেল অধরায়। সাত ভাগে বিভক্ত করে ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার নিজেদের দেশে ফেরত নেওয়ার কথা ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট প্রকাশ করে। তবে সেটা কাগজের পাতায় সীমাবদ্ধ রয়ে গেল, বাস্তবায়ন করা আদৌ সম্ভব হয়নি।

২০১৯ সালে গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে আরোপিত মামলার শুনানি শেষে ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারী মামলার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সরাসরি কোনো নির্দেশনা বা ঈঙ্গিত আসেনি। তারপর করোনা ও মিয়ানমার সেনা অভ্যুত্থানের কারণে লাল ফিতার দৌরাত্মার ন্যায় ঢাকা পড়ে যায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনা। ২০২১ সালের ১ ফ্রেরুয়ারী সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাই। এই রাজনীতি পটভূমি নতুনভাবে ভাবাতে শুরু করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনাকে। ১৮ জুন ২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক গৃহীত রেজুলেশনে দেশটির গণতান্ত্রিক সমস্যাসহ অনেক বিষয় উল্লেখ থাকলেও ছিটকে পড়ে যায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ইস্যু। ২০২১ সালের ১২ জুলাই জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৪৭তম অধিবেশনে রোহিঙ্গাবিষয়ক গৃহীত রেজুলেশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কোনো পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান নয়।

এরই মধ্যে নতুন নাটকীয়তা জন্ম দেয় ২০২২ সালে বাংলাদেশের কাছে মিয়ানমারের পাঠানো রোহিঙ্গাদের তালিকা। ১১ হাজার জনের তালিকা পাঠানোর কথা থাকলেও সেই তালিকায় স্হান পায় মাত্র ৭০০ জন মানুষ। সেই তালিকায় পরিবারের বাবার নাম আসলেও স্হান মেলেনি অন্যান্য সদস্যদের। এটাও মিয়ানমারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পিত কৌশল। স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের একজনকে রেখে অন্যজন যেতে চাইবেনা, ঘটলও তা-ই। এই তালিকায় স্হান পাওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে অস্বীকৃতি জানায়।

সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ইস্যুতে নতুন মাত্রা যুক্ত করলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট। গত ১৬ আগস্ট ২০২২ সালে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। রোহিঙ্গারা তার কাছে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আশা ব্যক্ত করেন। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে জানা গেল, তিনি বোঝানোর চেষ্টা করছেন রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এখনও অনুকূল পরিবেশ তৈরী হয় নি। তিনি তাদেরকে অপেক্ষা ও ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দেন।

অথচ এই রাখাইন রাজ্য নিয়ে কত-শত বাণিজ্যিক পরিকল্পনায় বিভোর রয়েছেন বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো। এর মধ্যে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প, থেলং মিয়ানমার-চীন তেল, গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ, ভারতের কালাদান বহুমুখী প্রকল্প, দুটি পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প, মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ স্হাপনকারী চার লেন মহাসড়ক স্হাপন প্রকল্প, রাশিয়ার তেল কোম্পানি বাশনেফটের বিনিয়োগ, জাপান সরকারের রাখাইনের মংডুর কাছাকাছি পরিকল্পিত ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার মতো প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকার সুকৌশলে কাজ করে যাচ্ছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করলে ভেস্তে যেতে পারে এই ধরনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি করে চলছে। সেই সূত্রে মিশেল ব্যাশেলেটের এ অপেক্ষার বাণী নতুন করে ভাবাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সমাধানের পথকে। এখন দেখার বিষয় এই অপেক্ষার অবসান কবে ঘটে। কবে নিশ্চিত হয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। বিশ্ববাসী সেটা দেখার জন্য অপেক্ষার প্রহর ঘুনছে।

লেখক,
তোফায়েল আহমেদ রামীম
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss