spot_img

৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, রবিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সর্বশেষ

চট্টগ্রাম নগরীর কোথায় কেমন পূজা হয়!

পূজো শব্দটা বাঙালী সনাতনীদের জন্য অনেক অনেক আবেগ এবং বছরের পর বছরের স্মৃতি নিয়ে আসে। সেটা যদি হয় বাঙালী সনাতনীদের ইউনেস্কো স্বীকৃতি প্রাপ্ত দূর্গাপূজা৷ যা কিনা বাঙালী সনাতনীদের সবচেয়ে বড় উৎসব।

সে উৎসবের কথা যদি বলতেই হয় তাহলে বলতে হবে চট্টগ্রামের কথা৷ বাংলাদেশের সনাতনীদের জন্য পূজোর শহর হচ্ছে চট্টগ্রাম। পূজো শুরুর আগে একমাস হাতে রেখে সনাতনীরা প্যান্ডেল তৈরী এবং নানান কারুকাজে সাজিয়ে তোলে শহরের বড় বড় মন্ডপ গুলো কে, যেগুলো দেখার জন্য শহরের একপ্রান্তের লোক অন্য প্রান্তে ছুটে আসে। জাঁকজমক ভাবে পালিত হয় প্রাচীন ঐতিহ্যে ভরা উৎসব দূর্গাপূজা৷

শহরের গোসালডাঙ্গার কল্পতরু সংঘ ও কালিবাড়ির মন্ডপ দেখার জন্য মানুষ দলে দলে ভীড় করে৷ দেবীর মূর্তি এবং মন্ডপ সজ্জাকরণ এবং আলোকসজ্জার মাধ্যমে সাজিয়ে তুলে মন্ডপ কে, এত সুন্দর কারুকাজ এবং শৈল্পিক ছোঁয়ায়। মন্ডপ গুলো হয়ে উঠে যেন মর্ত্যলোকের মাঝেই এক টুকরো স্বর্গ।

আগ্রাবাদ এবং পোর্ট এরিয়ার ভেতরের পূজো গুলো ভীষণ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয় তবে কাট্টলী পূজোর মন্ডপ সজ্জা এবং আলোকসজ্জা বরাবরই প্রশংসনীয়৷

শহরের নানান জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুই হাজারেরও বেশি পূজা হয়ে থাকে। তবে জাঁকজমকপূর্ণ পূজার কথা বলতে গেলে কোতোয়ালী থানার অধীনস্থ এলাকা পাথরঘাটার জুড়ি মেলা ভার। এই এলাকায় থানার সামনে থেকে শুরু করে পুরো এরিয়া জুড়ে একুশটি মন্ডপে পূজা হয়৷ তার মধ্যে ষোড়শীকুঞ্জ, সতীশবাবু লেইন, মেনকাস্কুল, বান্ডেল সংঘ, পাথরঘাটা দূর্গামন্দির পূজা কমিটি, আশরাফ আলী রোড পূজা উদযাপন পরিষদ, রাধাকৃষ্ণ মন্দির ইত্যাদি পূজা মন্ডপে ভরপুর এই এলাকা।

ভোর হতেই বীরেন্দ্র কিশোর ভদ্রের গলায় পাঠ করা মহালয়ার গান ও চণ্ডীপাঠ শোনা যায়। এলাকা সাঁঝবাতির আলো তে ঝলমল করে পাঁচদিন ব্যাপী। এই এলাকা অন্য এলাকা গুলোর চেয়ে’ও জন সমাগম বেশি হয়ে থাকে।

মাতৃ বন্দনায় মেতে উঠে তরুণ-তরুণী, বয়স্ক এবং বাচ্চারা৷ ধূতি, পাঞ্জাবী ও শাড়ি পরে দেবীর আরাধনা করে৷ পূজোর অঞ্জলি সহ এবং নানান লোকাচারের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ঢাকের কাঠির সাথে সন্ধ্যা আরতি তে থাকে ধুনুচি নাচ। নবপত্রিকা, কুমারী পূজা ও সন্ধিপূজা সহ রয়েছে দারুণ সব নিয়ম-কানুন।

শহরের অন্যতম মন্ডপের মধ্যে রয়েছে মহানগরের জে এম সেন হলের পূজো মন্ডপ৷ এই মন্ডপে দারুণ ধুমধামের সাথে পাঁচদিন ব্যাপী পালন করা হয় দূর্গোৎসব।

কুসুমকুমারী স্কুল এবং এর আশেপাশের পূজো গুলো তে নজর কেড়ে নেই দেবী মূর্তির সাথে সাথে মন্ডপসজ্জা সহ নানান কারুকাজ।

চট্টগ্রাম নগরীর দূর্গোৎসব বাকী জেলা থেকে’ও ধুমধাম করে হয়ে থাকে। এমন মনে হয় যেন শরৎ এর শিউলি ভরা পথে দেবী মর্ত্যের পথে পথে সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছেন আবার দেবীর বিদায়ের সময় হয়ে এলে মর্ত্যে এক শোকের ছায়া নেমে আসে। দেবী যেন তার বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বাঁধ ভাঙ্গা শোকের কান্নায় সকল কে ভাসিয়ে নিয়ে যান। সকলেই সিঁদুরে মাখা মুখে দেবী কে বিদায় জানিয়ে কান্নায় ফেটে পরে৷

বিদায়ক্ষণে সকলে দেবী কে তেল সিঁদুরে রাঙিয়ে দেয় এবং দীর্ঘ এক বছর পর আবার আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় দিয়ে বিসর্জন দিয়ে আসে দেবী মূর্তি।

 

লেখক
জয় চৌধুরী জয়ন্ত 
স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম। 

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss