শিশুসাহিত্যের জগৎ দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। সরকারি শিশুসাহিত্য পত্রিকাগুলো এখন আর আগের জায়গায় নেই। একসময় নবারুণ পত্রিকাটি হাত বাড়ালেই পাওয়া যেত। প্রচুর পাঠক ছিল এই পত্রিকার। এখন টর্চ জ্বালিয়েও তার টিকিটাও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। কিশোর বাংলা জ্বলে আবার হঠাৎ নিভে গেল। ধানশালিকের দেশ ও শিশু এ দুটো উচ্চমানের সরকারি পত্রিকা। অথচ উচিত ছিল স্কুলে-কলেজে, ঘরে ঘরে পত্রিকা দুটো পৌঁছে যাওয়ার। দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে হয়তো তাও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ধীরে ধীরে সরকারি পত্রিকাগুলো এতই অফিস কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে যে ভবিষ্যতে তার হাল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা বলা মুশকিল।
বেসরকারি একটি শিশু-কিশোর পত্রিকা ধরে রাখা বিরাট কঠিন কাজ। জনপ্রিয় পত্রিকা টইটম্বুর কখন চোখে দেখেছি মনে নেই। কী চমৎকার চমৎকার লেখা ছাপা হতো ওই পত্রিকায়। হয়তো আর্থিক অনটনের কারণে দুশো বছরের বুড়োর মতো মাথা তুলে উঠতে পারছে না। কিশোর আলোর বিশাল বহর থাকার পরও কেন শিশুসাহিত্যিকদের আপন হতে পারল না সেটাও ভাবার বিষয়।
কিশোর কণ্ঠ ও কিশোর পাতা পত্রিকা দুটো কিছুটা আলো ছড়াচ্ছে। কিশোর পাতার ব্যাপ্তি দ্রুত বাড়ছে। পত্রিকাটি নিয়মিতই বের হচ্ছে। কিশোর কণ্ঠ বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত একটি ঈর্ষান্বিত পত্রিকা। মাসের শুরুতেই পত্রিকাটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে বিশেষ কায়দায়। বিশ্লেষকদের তথ্য মতে এই পত্রিকার পাঠক সংখ্যা দুই থেকে তিন লাখের মতো। ভাবতেও অবাক লাগে। তবে এই পত্রিকার লেখার মান নিয়ে অনেকের প্রশ্নের শেষ নেই।
কুঁজো বুড়ির মতো কোমরে হাত দিয়ে দিয়ে চলে এরকম আরও কিছু গুণে-মানের পত্রিকা আছে। এসব পত্রিকার সম্পাদক-মালিকেরা পকেট থেকে দিতে দিতে বোধহয় আর সোজা হয়ে উঠতে পারছেন না। সীমাবদ্ধতারও একটা সীমা আছে। ছোটদের সময়, টুপটাপ, ঝিনুক, আলোর পাতা, কিশোর বেলা, আনন্দপুর ইত্যাদি পত্রিকাগুলোর উপর যদি সরকারের একআধটুও নজর পড়ত তাহলেও শিশুসাহিত্যকে অক্সিজেন দিয়ে হলেও বাঁচানো যেত।
শিশুসাহিত্যকে বড়ই তামাসার বস্তুতে পরিণত করেছে দৈনিক পত্রিকাগুলো। ইচ্ছেমতো ছাঁটাই-কাটাই চলছে নির্মমভাবে। কোনোটা অর্ধপৃষ্ঠা, কোনোটা “নাই পৃষ্ঠা”, কোনো কোনো পাতাকে বিভাগীয় সম্পাদকেরা ঠাট্টা- হাস্যকর বস্তুতেও পরিণত করেছেন।
ধীরে ধীরে শিশুতোষ পাতাগুলোর কী হাল হয় আমাদের জানা নেই। নবীন লেখকেরা কিসের উপর ভর করে দাঁড়াবে সেটারও কোনো জবাব নেই। দিন যতই আসছে খারাপই আসছে, যেটা চলে গেছে বোধহয় ভালোই গেছে।
(আলী আসকরের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লেখাটি সংগৃহীত)
চস/আজহার