spot_img

১৩ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, সোমবার
২৭শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মোঃ রাকিব

সর্বশেষ

উন্নয়নের নতুন মাইলফলক বঙ্গবন্ধু ট্যানেল

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক অপরূপ জেলা হচ্ছে চট্টগ্রাম। এ জেলার পাহাড়, সমুদ্র নদী সবকিছুই মানুষকে খুব সহজে মুগ্ধ করে। এই জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রামের সৌন্দর্য বহুগুন বৃদ্ধি করেছে। তার চেয়ে বড় কথা এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী নদী গুলোর মধ্যে অন্যতম। আপনারা জানেন,এই কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর পরিচালিত হচ্ছে যা বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। দেশের আমদানি এবং রপ্তানির সিংহভাগ এই বন্দরকে কেন্দ্র করেই চলছে। আপনারা জানেন, কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের একদিকে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা এবং অপর দিকে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা। তবে অতীতে চট্টগ্রাম মহানগরের তুলনায় দক্ষিণ জেলার যাতায়াত ব্যবস্থা অনেকটা পিছিয়ে ছিল। এবার যেন সেই ঘাটতি পূরণ করে দিল বঙ্গবন্ধু ট্যানেল। গত ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। এর সাথে-সাথে কর্ণফুলী নদীকে নতুন রূপে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরলো বঙ্গবন্ধু ট্যানেল।

এবার আসুন একটু বঙ্গবন্ধু ট্যানেল সমন্ধে বিস্তারিত জেনে নেই। এই ট্যানেলের পুরো নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল। এই ট্যানেল তৈরিতে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ এবং চীন সরকার। এই ট্যানেল তৈরিতে ব্যায় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চার ল্যানে তৈরি হয়েছে এটি। মূল ট্যানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। ট্যানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫০ কিলোমিটার। ট্যানেলে টিউব সংখ্যা দুটি। ট্যানেলের সর্বোচ্চ ঢাল ৪% এবং ট্যানেলের সবোর্চ্চ গভীরতা ৪২.৮০ মিটার। ট্যানেলের ভিতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার এবং বাহিরের ব্যাস ১১.৮০ মিটার। মূল ট্যানেলে আছে দুটি টিউব,যার দৈর্ঘ্য ৩.৪ কিলোমিটার। এছাড়া ট্যানেলের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ৫.৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি সড়ক রয়েছে। সাথে আছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ একটি ওভারব্রিজ। এই সড়কে মোটরসাইকেল এবং তিন চাকার গাড়ি ছাড়া সকল যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

এবার আসুন এই ট্যানেলের কাজে ব্যবহারিত প্রযুক্তি নিয়ে একটু বলি। এই ট্যানেলের ডিজাইন করেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন Supervision Consultant -SMEC-COWI JV কোম্পানি। এই ট্যানেল নির্মানের সকল টেকনিক্যাল বিষয় দেখার জন্য গঠিত হয়েছিল International Panel of Expert কমিটি। এটি নির্মাণ কালীন সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অধীনে BN SSU বাহিনী। এই ট্যানেলের জন্য মোট ১৯৬১৬ টি সেগমেন্ট প্রয়োজন হয়েছে। যেগুলো চায়নার জিয়াংশু প্রদেশের জেনজিয়াং শহরে অবস্থিত সেগমেন্টস প্রডাকশন ফ্যাক্টরিতে নির্মাণ করা হয়েছে এবং সেগুলো জাহাজের মাধ্যমে চট্টগ্রামে আনা হয়েছে। তবে আনয়নকৃত সেগমেন্ট এর মধ্যে ৪২০ টি সেগমেন্ট বাতিল হয়েছিল ত্রুটির কারণে। আবার প্রতি ৮ টি সেগমেন্ট একত্র করে তৈরি হয়েছে এক একটি রিং। এভাবেই এক রিংয়ের সঙ্গে অন্য রিং জোড়া দিয়ে তৈরি হয়েছে ২৪৫০ মিটারের ২টি ট্যানেল টিউবের কাজ।

এবার চলুন এই ট্যানেল তৈরির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেসকল ইতিবাচক প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আলোচনা করি। যান চলাচল স্বাভাবিক ভাবে শুরু হওয়ার পরেই বন্দরনগরী চট্টগ্রাম তথা সারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার যা আমাদের পর্যটন শিল্পের জন্য ইতিবাচক বলে আমি মনে করছি। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর দুই পাশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে আনোয়ারা পর্যন্ত মূল শহর সম্প্রসারিত করা যাবে।এছাড়া কর্ণফুলী নদীর উপর বিদ্যমান দুই সেতুর উপর যানবাহন চাপ কমবে এবং মূল শহরের নগরবাসীকে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাশে বসবাসে উৎসাহিত করার মাধ্যমে নগর থেকে জনচাপ লাঘব করা যাবে। এছাড়া এই ট্যানেলকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় আসবে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন। কারণ এটিকে কেন্দ্র করে সেখানে তৈরি হবে আবাসন প্রকল্প, শিল্পায়ন,পর্যটন শিল্পের বিকাশ সহ নানান অর্থনৈতিক কার্যক্রম। যার সুফল পাবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, আনোয়ারা এবং বাঁশখালী উপজেলা সহ আশেপাশের মানুষ। পরিশেষে বলতে পারি বঙ্গবন্ধু ট্যানেল আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো একধাপ এগিয়ে দিয়েছে।

মোঃ রাকিব
শিক্ষার্থী,সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম।

 

চস/আজহার

Latest Posts

spot_imgspot_img

Don't Miss