এক বন্ধুর পুরনো বন্ধু এলো একদিন ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতে। সহজ, সরল, মফস্বলের ভালো ছাত্র। কলেজ পর্যন্ত ভালো রেজাল্ট করে যাওয়া ছেলেটা তেমন কোন ভালো ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেল না। বরং একেকটা প্রতিযোগিতায় গিয়ে হারতে হারতে তার মনে হল সে তেমন ভালো ছাত্রও না।
সে লাইব্রেরীর সামনে বসে গল্প করছে আর বারবার এদিক সেদিক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। জিজ্ঞেস করতে বলল, তার খুব আফসোস সে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পায়নি। ১ মার্কও না, দশমিকের পরের কটা সংখ্যার ব্যবধানে ওই সিটটা অন্যের হয়ে গেছে।
তার বাবার যথেষ্ট টাকা নেই তাকে কোন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াবার। সে ভর্তি হয়েছে একটা সরকারি কলেজে। সেখানে গিয়ে নিজেকে মনে হয়েছে সে আসলে ওখানেও মানায় না। সে যেভাবে খুব সিরিয়াসলি পড়াশুনা করে জীবন বদলাতে চেয়েছিল ওখানকার ক্লাস, পড়াশুনায় ওই স্পিডটা নাকি নেই।
‘ভালো ইউনিভার্সিটির জন্য সে বেশি খারাপ আর মোটামুটি জায়গার জন্যে একটু ভালো। ঠিক তার জায়গাটা কোথাও নেই। কোনদিন হবেও না।’ সেদিন খুব মন খারাপ করা কিন্তু শান্ত গলায় ছেলেটা বলেছিল, সবার জন্য সবকিছু ঠিক হয়ে যায় না। কারো কারো গোটা জীবনটাই হেরে যাবার গল্প।
তাই কেউ যখন তাকে বলে যে সামনে অনেক ভালো কিছু হবে, সে হেসে উড়িয়ে দেয়। যে জানে তার জীবনটা এমন মিডিওকার ভাবেই কেটে যাবে। সবাই জিততে পারে না। চাইলেও পারে না। মোটিভেশনাল স্পিচ সবার জন্যে খাটে না।
কদিন আগে কি যেন একটা সরকারি চাকরির রেজাল্ট হল। এটা তার শেষ সরকারি চাকরির চেষ্টা ছিল। হয়নি। ছেলেটা বোধহয় ঠিকই বলেছে। সব কষ্টের গল্পের শেষ একভাবে হয়না।
ওর মতই কেউ হয়তো এতদিন লেগে থাকার পর আলোর মুখ দেখেছে। বেশির ভাগই যা চেয়েছিল পায়নি। জীবন যা দিয়েছে তাই নিয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই।
কেউ কেউ সারাজীবন অন্যদের জিততে দেখার জন্যেই জন্মেছে। তাদের জন্য বেঁচে থাকার অন্য নাম মেনে নেয়া আর মানিয়ে নেয়া।
লেখক: ফারজানা তাবাসসুম
চস/আজহার