সময়ের পরিক্রমায় আলোচনা হয়ে আসছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে থাকা বৈষম্য নিয়ে। যেখানে প্রতি বছর একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পিছনে ব্যয় করা হয় ১.৫ লক্ষাধিক টাকা সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর পিছনে ব্যয় করা হয় ১.৫ হাজার টাকা। এতে করেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ে সকল স্কীল ডেভেলপমেন্ট থেকে। যার ফলাফল স্বরূপ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীই বেকার থেকে যাচ্ছে। তবে আজকে আমি এমন একটি ফোরাম নিয়ে কথা বলবো যেটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে হওয়া এই বৈষম্য নিরসনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর সেটি হলো এন ইউ এস এস ডি এফ বাংলাদেশ।
এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশ এমন একটি সংগঠন যেটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্কীল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে। আমরা জানি সারা বাংলাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২’শ এর অধিক ক্যাম্পাস থাকলেও সেখানে শিক্ষার্থীদের স্কীল ডেভেলপমেন্টের পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। এতে করে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়ালেখার বাহিরে নিজের স্কীল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ পায়না। যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজের ক্যাম্পাসে বসেই সব ধরনের সুযোগ সুবিধা মিলছে সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা পুরোই নাজুক। এতে করে একাডেমিক পড়ালেখা শেষ করে হাজার-হাজার শিক্ষার্থী বের হলেও পর্যাপ্ত দক্ষতার অভাবে তারা বেকার থেকে যায়।
এসব বিষয় চিন্তা করেই ২০২০ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা একা মেধাবী তরুণ চিন্তা করলেন যে, তিনি এমন একটি ফোরাম প্রতিষ্ঠিত করবেন যেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায় সকল স্কীল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ পাবে। আর তিনি হলে আমাদের সকলের প্রিয় রিয়াজ হুসাইন ভাইয়া। তাঁর মেধা আর দক্ষতা দিয়ে এই ফোরাম পৌঁছেছে এক অনন্য উচ্চতায়। আজ আমাদের সেই এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কীল ডেভেলপমেন্টের একমাত্র আস্থার যায়গা। যেখানে মধ্যবিত্ত এবং নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের হাজার- হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্কীল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ পাচ্ছে।
বর্তমানে এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনভূক্ত প্রায় ৩’শ এর অধিক ক্যাম্পাসকে তাদের সাথে যুক্ত করেছে। যেখানে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী তাদের স্কীল নিয়ে কাজ করে নিজেকে স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলছে। এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশের রয়েছে একটি সুসংগঠিত এবং দক্ষ ১৭ সদস্যদের কেন্দ্রীয় কমিটি। যারা প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের যায়গায় সেরাদের সেরা। এছাড়া এই কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে রয়েছে ৭ টি বিভাগীয় টিম যাদের মাধ্যমে এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বাংলাদেশে।
এবার দেখা যাক এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কী কী সেবা প্রদান করছে। যেখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বছরে কমপক্ষে চারটি প্রেজেন্টেশন এবং একটি ভাইভা দিয়ে থাকে সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ গুলো চিন্তায়ই করতে পারে না। যদিও বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বছরে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এসব বিষয়ে মাথায় রেখে এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর কেইস স্টাডি এবং প্রেজেন্টেশন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। তবে এই প্রতিযোগিতা শুরু করার পূর্বেই নামিদামি কর্পোরেট ব্যক্তিত্বের দ্বারা আগে সেশন করানো হয়।
এছাড়া প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের জন্য কমপক্ষে ২ থেকে ৪ টি পর্যন্ত অনলাইন সেশন নেওয়া হয় যেগুলো আমাদের চাকরি জগতের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যেসকল সেশন গুলো নিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সিভি রাইটিং, ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট রাইটিং, স্যোশাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট,ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স, ক্যারিয়ার গাইড লাইন, লিংডিন প্রোফাইল, কর্পোরেট গ্রুমিং , ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স, স্যোশাল নেটওয়ার্কিং, জব হান্টিং সহ এরকম অগণিত সেশন যেগুলোর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী নিজের বিভিন্ন স্কীল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ পাচ্ছে।
এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন বিভিন্ন ভাইভা দিয়ে কিংবা বিভিন্ন ইন্টার্নশিপ প্রোগ্ৰামে যুক্ত হয়ে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে ঠিক একই ভাবে এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রেখেছে বিভিন্ন কম্বাইন কোর্সের ব্যবস্থা। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্পেশাল মেম্বারশিপ। যেখানে একজন শিক্ষার্থী তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত নিজের বিভিন্ন স্কীল ডেভেলপমেন্ট করতে পারে। এছাড়া রয়েছে পাবলিক স্পিকিং মাস্টারমাইন্ড শিরোনামে একটি প্রতিযোগিতা যেটি ইতিমধ্যেই সারা বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেখানে সেরা দশজনকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রেস্ট এবং প্রাইজ মানি দেওয়া হয়।
এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেওয়া সবচেয়ে বড় মেগা ইভেন্ট হচ্ছে এন ইউ স্কীল ডেভেলপমেন্ট সামিট। যেটি প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেখানে বাংলাদেশের প্রথম সারির বিভিন্ন কর্পোরেট কর্মকর্তারা এবং সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার বিষয়ক বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও এই সামিটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করার সাথে সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করার ও সুযোগ পেয়ে থাকে। ইতিমধ্যে আমাদের ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রংপুরে পাঁচটি সফল সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের উক্ত সামিট গুলো সারা বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং তাদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে আরো সচেতন হতে অনুপ্রাণিত করতে ভূমিকা রাখছে।
আমাদের আরেকটি বড় ইভেন্ট হচ্ছে টিম বিল্ডিং ডে। যেখানে কয়েকজন কর্পোরেট ব্যক্তিত্বদের নিয়ে আমরা এক জায়গায় মিলিত হয়ে তাদের থেকে ক্যারিয়ার বিষয়ক বিভিন্ন গাইডলাইন নিয়ে থাকি। এছাড়া খুব শীঘ্রই এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জব ফেয়ার করার চিন্তা ভাবনা করছে। ইতিমধ্যে সেসব বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলমান রয়েছে। আমার মনে হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এরকম বিনামূল্যে বৃহৎ পরিসরে কাজ করা কোনো ফোরাম এখনো তৈরি হয়নি। এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশ বিশ্বাস করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে সম্ভাবনা রয়েছে একদিন তারা সেটি সারা বাংলাদেশের সামনে তুলে ধরবে । আর এভাবেই বর্তমানে স্কীল ডেভেলপমেন্টের যায়গায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আস্থা আর ভালোবাসার ফোরামে রূপান্তিত হয়েছে আমাদের এন ইউ এস ডি এফ বাংলাদেশ।
লেখক
মোঃ রাকিব
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ।
সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম।
চস/আজহার