ঠিক ৭৩০ দিন আগে আজকের দিনে লন্ডনের বুকে পা রাখি। হ্যাঁ, ২ বছর আগে! খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলো সময়টা। প্রবাস জীবনে এ ২ বছরে অনেক কিছু পেয়েছি। এজন্যে আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া জানাই।
একসময় ভাবতাম কীভাবে কাটবে আমার অসহ্যের দিনগুলো, আর এখন ভাবি কখন শেষ হয়ে গেলো ২ বছর! পরিবার-প্রিয়জন ছাড়া এ প্রবাস জীবন মোটেও সুখের ছিল না। আমার শিক্ষাজীবনের শুরুটা হয়েছিল নিজ গ্রাম শাল্লায়,তার পর নিজ জেলা সুনামগঞ্জে, তারপর সিলেটে চলে আসা। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে একই শহরে অনার্স- মাস্টার্স সম্পন্ন করি। এরপর চাকরী প্রস্তুতির জন্যে ঢাকায় কিছুদিন থাকা হয়। সব জায়গায় আমার ভাইদের সান্নিধ্য পেয়েছি। তাঁদের স্নেহ-মায়া-পরামর্শে আমার জীবনটা এমনভাবে পরিপূর্ণ ছিল যে, তাঁদের থেকে দূরে থাকতে পারা আমার কাছে দুঃসাধ্যের ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমার প্রাণপ্রিয় ভাইগুলোই আমাকে ইউকেতে আসার সৎসাহস দেন। আসার পর হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও তাঁরা আমার সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। ভাইদের এবং আমার পরিবারের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ।
যুক্তরাজ্যে আসার পর আমার পরিবারকে যখন ভীষণভাবে মিস করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলাম, তখন থেকে আজ পর্যন্ত কিছু রিলেটিভ- বন্ধুবান্ধব- পরিচিতজন আমার সুদিন – দুর্দিনের সঙ্গী হয়ে বিভিন্নভাবে পাশে থেকেছে।আগে শুনেছি, ইউরোপ- আমেরিকায় বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যাদের আপন বোন আছে, তাদের কাছে ঐ এলাকাটা নিজ বাড়ির মতো মনে হয়। সেক্ষেত্রে বেশ সুযোগ – সুবিধা থাকে । কিন্তু এদেশে আমার নিজের আপন কোনো বোন না থাকলেও মামাতো বোনরা নিজের বোনের মতো পাশে থেকেছে। মানসিক সাপোর্ট করেছে, এখনও করে যাচ্ছে, তা কোনোদিনও ভুলতে পারবো না। কৃতজ্ঞতা বোন। কৃতজ্ঞ যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বন্ধুবান্ধবসহ সবার প্রতি। আরেকটা কথা, আজ পরিস্থিতির কারণ অথবা ভাগ্য বলে বিদেশে অবস্থান করছি বলে দেশকে কখনও ভুলবো না, দেশকে ভীষণ ভালোবাসি, দেশের মানুষকেও ভীষণ ভালোবাসি। সবাই আমার জন্যে দোয়া করবেন।
গত ২ বছরে প্রাপ্তির খাতায় হিসেব কষতে গেলে আমার রব আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন, যা আমি কখনও কল্পনাও করি নি। আমি শিখেছি, কীভাবে একটা ব্যয়বহুল শহরে একা একা প্রতিনিয়ত টিকে থাকার যুদ্ধ করতে হয়। কীভাবে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে জুগিয়ে সফলভাবে পথ চলতে হয়। প্রত্যেক সফলতার পিছনে থাকে হাজারো ব্যর্থতার গল্প। ব্যর্থতার মধ্যে শেখার অনেক কিছু আছে। এসব ব্যর্থতায় হাল ছাড়া যাবে না। জীবন বাস্তবতায় নিজের ওপর অটল বিশ্বাস রেখে যেকোনো কাজে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।
লেখক: টিপু সুলতান
লন্ডন, যুক্তরাজ্য।
চস/আজহার